কক্সবাংলা ডটকম(২৮ মে) :: বৃটিশ সরকারি কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন হীরাম কক্সে’র রেঙ্গুন মিশনের পর তৎকালীন ব্রিটিশ রাজ ১৭৮৯ সালে আরাকানি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের (বার্মায় আরাকানি এবং রাখাইনদের মধ্যে গৃহযুদ্ধে) পুনর্বাসনের দায়িত্ব দিয়ে হিরাম কক্স’কে চট্টগ্রামের কালেক্টর মি. ফায়ারের কাছে পাঠানো হয়।
হিরাম কক্স নিযুক্তির পূর্বে চট্টগ্রামের কালেক্টর তাঁর নিজস্ব লোকজনদের মাধ্যমে উদ্বাস্তুদের দেখ-ভাল করতেন। ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স নিয়োগ পাওয়ার পরে চট্টগ্রামের পরীর পাহাড়ে পৌঁছে কালেক্টর মি. ফায়ারের কাছে তাঁর পরিচয় পত্র পেশ করেন। পরবর্তীতে ক্যাপ্টেন হীরাম কক্স’কে পালঙ্কির সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দান করা হয়।
তখন শুষ্ক মওসুম। ১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর বা ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি। ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স তার বাহিনী নিয়ে রামু পৌঁছেন। রামু পৌঁছে আরাকানি উদ্বাজদের অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন এবং তাদের পুনর্বাসনে পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তৎকালীন সময়ে প্রতি পরিবারকে ২.৪ একর জমি এবং ছয় মাসের খাদ্যসামগ্রী প্রদান করা হয়েছিল।
পরে, জনকল্যানে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স রাখাইন অধ্যুষিত এলাকায় একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। যা স্থানীয়দের মাঝে কক্স সাহেবের বাজার নামে পরিচিত হয়।তিনি বার্মা সরকারের এবং জলদস্যুদের যে কোন আক্রমণ মোকাবেলার জন্য বাঁকখালী নদীর তীরে সেনা ঘাঁটি স্থাপনের সুপারিশ করেন।
রামু হতে উখিয়াঘাট ও নাফ নদী পর্যন্ত তীর হতে ত্রিশ মাইল দূরত্ব রেখে একটা রাস্তা নির্মাণের প্রস্তাব করেন। অবশ্য পূর্বে লেফটেনেন্ট টমাস ব্রগহাম এই রাস্তা নির্মাণের প্রস্তাব করেছিলেন। এই রাস্তা নির্মাণের প্রস্তাব বোর্ড অব রেভিনিউ সমর্থন করেন। রাস্তা নির্মাণের কাজে তিনি উদ্বাস্তুদের নিয়োগ করেন।
রামু হতে উখিয়াঘাট পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে উদ্বাস্তুদের ব্যবহারের জন্য বোর্ড অব রেভিনিউ ঢাকার কালেক্টরকে ৩৫০০ টি কোদাল প্রেরণের নির্দেশ দেন।ক্যাপ্টেন হীরাম কক্স রামু হতে উখিয়ারঘাট পর্যন্ত প্রস্তাবিত রাস্তার দুই পাশে উদ্বাস্তুদের বসতি দেবার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি আদর্শ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। বনভূমি পরিষ্কার ও আবাদের জন্য উদ্বাহুদের ২০০টি কোদাল, ১০০টি কাঁটারি, ১২টি বড় কাঁচি, ২০টি করাত, ৫০টি চালু কুঠার এবং ৪টি শান পাথর দেওয়া হয়।
গবেষকদের মতে, ক্যাপ্টেন কক্স রামুর অফিসে বসেই তার যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করতেন। তিনি অফিসের সাথেই তার থাকার ব্যবস্থা করেন। যেটি রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসেরচর গ্রামে (টিনের বাংলো বাড়ি) এখনো কালের সাক্ষী হয়ে আছে।
যার বয়স আনুমানিক ২২০ বছর ।আরাকানী উদ্বাস্তুদের সম্পূর্ণ পুনর্বাসনের পূর্বেই বর্ষা মওসুম শুরু হয়। এতে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অপরদিকে মানবিক সেবা করতে গিয়ে এক পর্যায়ে তিনি ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হন।
রামুতে তখন উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিলো কল্পনা বিলাস। ক্যাপ্টেন হীরাম কক্স বলতে গেলে প্রায় বিনা চিকিৎসায় ৩৯ বছর বয়সে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২রা আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন ।তাঁকে রামু বাঁকখালী তীরে সমাধিস্ত করা হয়েছিল বলে রামুতে একটি কথা প্রচলিত আছে। বাঁকখালী নদীর গতি পথ পরিবর্তন ও ভাংগনে সেই সমাধি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। আরও কথিত আছে তাঁর মরদেহ নেওয়ার জন্য চকরিয়ার মেধাকচ্ছপিয়া এলাকার বড়খানে জাহাজ নিয়ে এসেছিলেন কক্স সাহেবের স্ত্রী ম্যাডাম কক্স পিয়ার।
লোকমুখে শোনা যায় ম্যাডাম কক্স পিয়ার এর নামে “মেধাকচ্ছপিয়া” নামকরণ করা হয়। এখন মেধাকচ্ছপিয়া দেশের অন্যতম জাতীয় উদ্যান হিসেবে পরিচিত।ক্যাপ্টেন কক্স’র মৃত্যুর পরে ঢাকার রেজিস্টার মি. কার হীরাম কক্স’র স্থলাভিষিক্ত হন।
ইতোধ্যেই হিরাম কক্সে’র নামে প্রতিষ্ঠিত বাজারটি “কক্স সাহেবের বাজার” নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ফলে মি. কার বাজারের নাম “কক্স সাহেবের বাজার হিসেবে রেখে দেন। পরবর্তীকালে বাজারটি “কক্স সাহেবের বাজার” থেকে “কক্সবাজার” এ পরিনত হয়।গবেষকদের মতে, হীরাম কক্স স্কটল্যান্ডে ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। হিরাম কক্স এক সন্তানের জনক। যার নাম ক্যাপ্টেন হেনরি কক্স।
ক্যাপ্টেন হীরাম কক্স একজন ব্রিটিশ সিভিল সার্ভেন্ট হিসেবে পরিচিতি পায়, ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দে যখন তাঁকে ব্রিটিশ কূটনৈতিক হিসেবে তৎকালীন বার্মার রেঙ্গুনে নিযুক্ত করা হয়।ক্যাপ্টেন হীরাম কক্স এর মৃত্যুর বহুবছর পরে ১৮২১ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয় তার একমাত্র লিখা “Journal of a Resident in the Burmhan Empire” গ্রন্থ। সেই গ্রন্থ থেকে তৎকালীন বার্মায় বৃটিশ এবং ফরাসিদের অবস্থান, বার্মার প্রাকৃতির মূল্যবান সম্পদের বিবরণ, আরাকান জলদস্যুদের নির্যাতন আর আরাকানের গৃহযুদ্ধ, তার চট্টগ্রামের দক্ষিণ অঞ্চলে নিয়োগ সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।
Posted ২:৫৮ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৯ মে ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta